অনলাইন ডেস্ক
পাকিস্তানে নারীদের ওপর বর্বরোচিত ‘অনার কিলিং’ বা ‘সম্মান রক্ষার্থে হত্যার’ ঘটনার মামলায় তিন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
বিবিসি বাংলা জানায়, ২০১১ সালে উত্তর কোহিস্তানের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি ভিডিওতে নিহত তিন নারীকে গান গাইতে ও হাততালি দিতে দেখা যায়। সেই ভিডিও প্রকাশের জের ধরে সে সময় ওই তিন নারীকে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনা জানাজানি হয় ২০১২ সালে, যখন ভিডিওর সঙ্গে জড়িত দু্ই ব্যক্তির একজনের ভাই আফজাল কোহিস্তানি তার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে রীতি লঙ্ঘন করে ওই নারীকে হত্যার অভিযোগ তোলেন।
বিচারের দাবিতে আফজাল কোহিস্তানির করা ক্যাম্পেইন সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সুপ্রিম কোর্ট এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দেয়।
তদন্তকারীরা ওই দুর্গম গ্রামে পৌঁছানোর জন্য দুই দিন পাহাড়ি পথে ট্র্যাক করেন এবং স্থানীয়দের বক্তব্য নেন।
সেসময় স্থানীয়রা তাদের তিনজন নারীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানালেও পরে ওই দাবি ভুল প্রমাণিত হয়।
অবশেষে ২০১৯ সালে ওই তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করতে সক্ষম হয়।
শাস্তি পাওয়া তিন ব্যক্তি ওমর খান, সাবির এবং সাহির নিহত হওয়া তিন নারীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই তিন তরুণীর মৃতদেহ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেসময় ওই নারীদের সঙ্গে থাকা দুজন পুরুষও এখন পর্যন্ত পলাতক। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও দুই নারীর ভাগ্যে কী হয়েছে – তা এখনো জানা যায়নি।
ওই হত্যাকাণ্ডের পর সহিংসতা সৃষ্টি হলে এতে আরও চারজন নিহত হয়।
ভিডিওতে একজন পুরুষকেও নাচতে দেখা যায়। তার সঙ্গে এক পাশে বসে তাল মিলিয়েছিলেন ওই তিন নারী। যদিও ওই পুরুষ আর নারীদের কখনোই এক ফ্রেমে দেখা যায়নি। ভিডিওটি ধারণ করছিলেন আরেকজন পুরুষ।
শুধু এটুকুই ছিল ওই তিন নারীর দোষ, যার জন্য তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় তাদের পরিবারের সদস্যরাই।
উত্তর কোহিস্তানের দুর্গম অঞ্চলের মানুষ পরিবারের সম্মানের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো রক্তের বিনিময়েই সুরাহা করা হয়।
স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী, কোনো নারীর বিরুদ্ধে বিবাহ রীতির পরিপন্থী কোনো কার্যক্রমে জড়ানোর অভিযোগ উঠলে – সেটি যত তুচ্ছই হোক না কেন – তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে ওই নারীকে হত্যা করে, পরে অভিযুক্ত পুরুষকে হত্যা করে।
যেই পুরুষকে হত্যা করা হবে, তার পরিবারও রীতি মোতাবেক বাধা দিতে পারবে না। ফলে প্রকাশ হওয়া ভিডিওটিতে যতজনকে দেখা গিয়েছিল, তাদের সবারই জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে।