অনলাইন ডেস্ক
চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক প্রকৌশলী গ্রুপ ক্যাপ্টেন খন্দকার সাজ্জাদুর রহিমের (অব.) নিয়োগ বাতিল করেছে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ। একইসাথে প্রধান প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) গাজী মাহমুদ ইকবালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ফেরত সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান পরিচালনা পর্ষদ।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কুর্মিটোলায় বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় এক বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত দেয় পরিচালনা পর্ষদ। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিত্ব করেন এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী।
বিমান পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সভায় সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এমডি নিয়োগ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানা যায়, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ইজিপ্ট এয়ার থেকে ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দুটির মধ্যে একটি বিমান বহরে যুক্ত হয়। অপরটি যুক্ত হয় মে মাসে। এক বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর এর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়া আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।
দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও নতুন ইঞ্জিন আনা হয় ভাড়ায়। কিন্তু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেই ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও বিকল হয়ে যায়। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হয় বিমানকে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমানকে সব ব্যয় বহন করে।
এয়ারক্রাফট দুটি ভাড়ায় আনার পর থেকে চারটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিনগুলো বিমানের মেরামত করে দেওয়ার কথা। সে হিসেবে চারটি ইঞ্জিন ক্রয় ও মেরামত বাবদ বিমানের ৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে বলে সূত্র জানায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩২১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া উড়োজাহাজ দুটির মাসিক ভাড়া বাবদ বিমানকে প্রতি মাসে ১.১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হয়। এতে চার বছরে দুটি এয়ারক্রাফটের জন্য ৪৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা দিতে হয়।
অপর দিকে চুক্তি অনুযায়ী উড়োজাহাজ দুটি ইজিপ্ট এয়ারকে ফেরত দেওয়ার সময় আগের অবস্থায় করে দিতে হয়। এজন্য খরচ বহন করে বিমান।
ভাড়া নেওয়ার পর বিমান উড়োজাহাজ দুটি রং পরিবর্তন করে বিমানের লোগো স্থাপন করে। ভেতরেও রং পরিবর্তন করে। সিটের সংখ্যা বাড়ায়। আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হলে কনসালটেন্ট ফার্মের হিসাব অনুযায়ী বিমানকে দুটি এয়ারক্রাফটের জন্য ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৮৩৭ কোটি টাকা।
এ বছর ১৬ জুলাই একটি উড়োজাহাজ ইজিপ্ট এয়ারকে ফেরত দেয় বিমান। ফেরত পাঠাতে পাওনা পরিশোধসহ ৪.১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয় বিমানের। অপর একটি উড়োজাহাজ এখনো ফেরত দিতে পারেনি বিমান।