নিজস্ব প্রতিবেদক,
গাড়ি নয় যেন মানুষের খাঁচা। নেই কোনো ভালো বসার আসন, যা আছে সেগুলো ময়লা ও ধুলাবালিতে ভরা। আবার কখনো ছারপোকা কামড়ায়, তার উপর বসতে গেলে পা গুটিয়ে রাখতে হয়। নেই কোন ফ্যান কিংবা লাইট, জানালাগুলোর একটার কাচ থাকলে অন্যটার নেই, আর যেগুলোর আছে সেগুলোও ভাঙ্গা, জোড়াতালি দেয়া। ভেতরের নোংরা ময়লা তো আছেই।
এবার যাই গাড়ির বাহিরের দিকে, বাহিরের দিকে তাকালে প্রথমেই নজরে আসে রং উঠে যাওয়া। দেখাচ্ছে জং ধরা টিন। তার উপরে অসংখ্য লম্বালম্বি স্পট। এ যেন দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটি কোন ভাবে সোজা করা হয়েছে। নেই তার কোনো ইন্ডিকেট লাইট কিংবা হেডলাইট। সামনের গ্লাসও রয়েছে ভাঙা চিহ্ন ।
নগরীর জুরাইন থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত চলাচলকারী বাহাদুর শাহ পরিবহন সম্পর্কে বলা হচ্ছিল এতক্ষণ ধরে। এখানেই শেষ নয় এসব গাড়িতে চড়ে যাত্রীরা যে আরাম-আয়েশে থাকেন সেটা হয়তো আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হবে না।
তবে এ পরিবহন সেবার মান না বাড়লেও বেড়েছে ভাড়া ও ভোগান্তি। প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্নভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ গাড়িতে চড়ে। বাহাদুর শাহ পরিবহনে চলাচলকারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পিরুলী বলেন, পুরনো দিনের মুড়ির টিনের মতই হয়ে গেছে বাহাদুর শাহ পরিবহন। ভালোভাবে সিটে বসা যায় না, তার ওপর গায়ের উপরে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে। গরমের দিনে এত গরম, একেতো পাখা নেই, তার উপরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাসের ভেতর থেকে গন্ধ বের হয।় যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করা হয়।় তিনি আরো বলেন, নারীদের জন্য নির্ধারিত আসন থাকলেও সেখানে পুরুষ বসে থাকে, এসব বলতে গেলে প্রতিনিয়ত অপমান অপদস্থ হতে হয়।় তাছাড়া ভাড়া ছিল দশ টাকা, সেখান থেকে ১২ টাকা, সেখান থেকে বাড়িয়ে করেছে ১৫ টাকা। এছাড়াও এক কিলোমিটার ভাড়া পনের টাকা পাঁচ কিলোমিটার গেল সেই একিই ভাড়া রাখে । এ নিয়ে কথা বলতে গেলে বলে গাড়ি থেকে নেমে যান, এর সব কিছু কারণে তেমন কোনো প্রতিবাদ করা হয় না।
এ সব পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী ওমর ফারুক বলেন, নামেই সিটিং সার্ভিস, আসলে পুরাই চিটিং। যে সিট আছে তাতে দুইজন বসতে পারবে কিন্তু সেখানে তিন থেকে চারজন বসানো হয়। যাত্রী উঠতে পারবে ২০ জন সেখানে ২৮ থেকে ৩০ জন যাত্রী উঠায়। ফলে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা বসে থাকা যাত্রীদের শরীরের উপরে চলে আসে।
এ পরিবহন গুলোর ফিটনেস নেই, মেয়াদোত্তীর্ণ, গাড়ি কিংবা চালক কারো কোনো লাইসেন্স নেই। এসবের কারণে রাস্তার মধ্যে হয়ে যাচ্ছে গাড়ি বিকল। সেইসঙ্গে বিকল গাড়ির কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও ঘটেছে কিন্তু আমাদের প্রশাসনের সেই দিকে কোন নজর নেই। বাহাদুর শাহ্ পরিবহনের একজন চালকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গাড়ির ফিটনেস নেই, লাইসেন্স নেই কিছুই নেই । যখনই বিআরটিএ অভিযান শুরু হয় তখন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। আবার যখন অভিযান বন্ধ হয়ে যায় তখনি চলে।
শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের গাড়ি বলে চলতে পারছে, না হলে এগুলো কবে ডাম্পিং এর চলে যেত।