জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ রায় দেন। মামলার রায় ঘোষণার পর একটা প্রশ্ন উঠেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন?
বিএনপি নেতারা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতেই তড়িঘড়ি করে বিচারকাজ শেষ করছে সরকার।
বুধবার খালেদা জিয়া নিজেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাকে সাজা দিয়ে সরকার আসলে ভোট থেকে তাকে বাদ দিতে চাইছে। এদিকে সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে এবং ন্যূনতম দুই বছর দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকবার যোগ্যতা হারান যে কেউ। এমন হলে মুক্তিলাভের ৫ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত ভোটে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। রায় অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে নিম্ন আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে বিষয়টি অন্য রকম হবে। রায়ের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা এখন আপিল করতে পারবেন।
নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে আছে, নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক যদি কারও সাজা হয় তাহলে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না। এখন কথা হচ্ছে, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের দু’টো রায় আছে। যেখানে এই ব্যাপারে সুনিশ্চিত বলা আছে, আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায় নাই বলে দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। আর একটি রায় আছে, (যে অনুযায়ী) তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে উনার ব্যাপারে আপিল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কি সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা তাদের ব্যাপার। আর সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক গণমাধ্যমকে বলেন, নিম্ন আদালতের সাজা নিয়ে আপিল হবে। সেক্ষেত্রে বিচারাধীন অবস্থায় ভোটে অংশ নিতে বাধা নেই।
এমন নজির বাংলাদেশে আগেও আছে। নবম সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ আসন থেকে এভাবেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তার ১৩ বছর সাজা হয়েছিল। সাজার পরেও খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন- এই হলো বিধান। কিন্তু সাজাটি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হবে। বিচারিক আদালত হলে হাইকোর্টে আপিল হবে, তারপর আবার আপিল বিভাগে আপিল হবে। সে পর্যন্ত গিয়ে যদি সাজা টিকে যায়, তাহলে তিনি সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।
তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায় পেরিয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা কম। শফিক আহমেদ আরও বলেন, হাইকোর্ট কিংবা আপিল বিভাগে বিচারিক আদালতের সাজা স্থগিত হয়ে গেলে বা জামিনে থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারা যায়। তবে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক আদালতের সাজা টিকে গেলে তখন যদি তিনি সংসদ সদস্য হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।