ঘর থেকে বের হলেই ধূলা। রাজধানীতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলেই নগরবাসীর চেনা দুর্ভোগ। তাকে পথ চলতে হবে ভারী ধূলার সঙ্গে লড়াই করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বায়ুর দিক পরিবর্তন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ঢাকাবাসী ভুগছে ধূলা মিশ্রিত বাতাসে। ফুসফুস ও হার্টের রোগসহ সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিল শারীরিক সমস্যা। ধূলা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন পানি ছিটানোর গাড়ি কিনলেও তার সুফল পাচ্ছেন না নগরীর মানুষ।
উড়ছে ধূলা। প্রতিবছর শীত-বসন্তে নগরবাসীর পরিচিত যন্ত্রণা। প্রধান সড়ক থেকে গলির পথ সর্বত্রই ধূলার আঁধার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স সহজ করে বললে বাতাসে দূষণের মাত্রা ৫০ এর মধ্যে থাকলে তা গ্রহণ করা যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বাতাসে এই মাত্রা পাওয়া যায় তিন শতাধিক। প্রতিনিয়ত প্রত্যাহিক কর্মে ঘর থেকে বের হওয়া নগরবাসীর আক্ষেপ কবে নিস্তার মিলবে ধুলাময় এ পরিবেশ থেকে।
কয়েকজন নগরবাসী বলেন, ‘মনে হয় কুয়াশা পড়ছে কিন্তু আসলে ধূলা বালু। ধূলার মধ্যে শ্বাস নেয়া যায় না। শ্বাস নিতে গেলে কষ্ট হয়। খাবারের দোকানের মধ্যে ধূলা উড়ে পড়ে। তারা আরো অভিযোগ করেন, ‘বাচ্চারা যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে তখন তাদের শরীরে ধূলা বালু লেগে থাকে। আমরা কখনও দেখলাম না সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তায় পানি ছিটিয়ে ধূলা বালু নিবারণ করা হয়েছে।
নগরীতে যে স্বল্প সবুজ রয়েছে তা থেকে অক্সিজেন নির্গমনের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া.তাও বাধা পেয়েছে ধূলার আধিক্যে। তাই সহসাই সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া না হলে অদূরে হয়তো ঢাকা পরিণত হবে রোগের নগরীতে। সমন্বিত সংস্থাগুলোর নজর দেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
গেলো মাসে একটা রিপোর্ট আসছে যেখানে ঢাকা শহরের নাম সবার উপরে। ২০১৭ সালের এই রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে যতগুলো লোক মারা যায় তাদের ২৫ ভাগ মানুষ পরিবেশের কারণে মারা যায়। আর এই ২৫ ভাগের মধ্যে ৭৫ ভাগ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়। এটা আমাদের অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে ঢাকাতে বসবাস করার কোনো যোগ্যতা থাকবেনা। নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘রাত ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তারা যদি (সিটি কর্পোরেশন) পানি স্প্রে করে, তাহলে অক্সিজেন প্রাপ্তি বেড়ে যাবে এবং ঢাকা শহরে ধুলাবালি অনেক কমে যাবে।’
এদিকে বুকভরা নি:শ্বাস নেয়া তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন তা নেই বাতাসে। রাজধানীর বাতাস আচ্ছন্ন ধূলায়। প্রশ্ন কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি কর্পোরেশনের কেনা পানি ছিটানোর গাড়ি কতটা কাজে আসলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানা যায় বিশ্বের সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর বাতাসের শহরের তালিকায় ১৬০০ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ২৩তম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ব্যাপক সবুজায়ন আর সঠিক পরিকল্পনাই পারে মুক্তি দিতে ধুলাযন্ত্রণা থেকে।