মো.তোফাজ্জল হোসেন,নিজস্ব প্রতিবেদক
এ যেন এক বিরল ঘটনা।টিফিনের জমানো টাকা থেকে ১৫০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র রাইয়ান।ঢাকার কেরানীগঞ্জের কৈবর্তপাড়ার বাসিন্দা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র,দ্বীন ইসলাম রাইয়ান।বয়স মাত্র ৯ বছর।বাবা মো.রফিকুল ইসলাম বাবু এবং মাতা লাবনী আক্তার এর একমাত্র সন্তান সে। স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে গত ১৭ মার্চ। খুলবে কবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সারাদেশ যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য লকডাউন।এতে কয়েকদিন যাবৎ ঘরে আবদ্ধ তার পরিবার। করোনা ভাইরাসের জন্য স্থবির হয়ে আছে তার ধরনী। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপি শুরু হয়েছে লক ডাউন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরুচ্ছে না কেউ। নিজ বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরে শুয়ে বসে গল্পের আড্ডায় অথবা অনেকে টিভি দেখার মধ্যদিয়ে অবসর সময় কাটছে অনেকেই। অপর দিকে সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্ধ অংশ অর্ধাহারে অনাহারে কাটানো দিন মজুর, অসহায়, দুস্থ্য খেটে খাওয়া সাধারণ পেশা মানুষের কথা ভাবছেন না কেউ।তখন বইয়ের জগৎ থেকে বের হয়ে বাস্তব জগতে পরিস্থিতি উপলব্ধি করেন রাইয়ান।
ছোট্ট রাইয়ান বলেন, দেশব্যাপি লক ডাউন শুরু হলেও দেশে অনেকে আছেন যারা সকালে কিছু খেয়ে কাজে না গেলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের দুপুরের খাবার। ঠিক তাদের জন্যই কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রাইয়ান।
রাইয়ান স্কুলের টিফিনের টাকা জমিয়ে একটা ভালো ক্রিকেট ব্যাট কেনার স্বপ্ন ছিলো দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণ আজ সম্পূর্ণ বিপরীতে। অসহায় ও গরীব দুঃখী মানুষের জন্য মন কেঁদে উঠে ছিল ছোট্ট রাইয়ানের। নিজের জমানো টাকায় খুব বেশি পূর্ণ ক্রয় করতে পারবে না যেনে বাধ্য হয়ে মা এবং প্রবাসী বাবার স্মরনাপন্ন হয়। টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে তার বাবাকে।
অসহায় মানুষের কষ্ট দেখে এই বয়সের ছেলে বাধ্য হয়েছেন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে গরীব সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মুখে আহার তুলে দিতে সে তার জমানো টাকা এবং প্রবাসী বাবার পাঠানো টাকায়।তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে বাজারে গিয়ে কিনে নিয়ে আসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব সামগ্রী যা দিয়ে ২ অথবা ৩ দিন চলতে পারবে একটি সাধারণ পরিবার। বাড়ির লোকজন সাথে নিয়ে নিজের হাতে চাউল,ডাল,আটা,পিয়াজ,আলু ও তৈল। একত্রে পৃথক পৃথক প্যাকেট করে বিলিয়ে দিয়েছেন তার বাড়ির আশেপাশের গরীব ও অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে।
দেখা যায়, অনেক বিত্তবানগণ মুখ লুকিয়ে বসে আছে এখনও। সেবা প্রদানের নুন্যতম ইচ্ছা তাদের মধ্যে এখনও দেখা যাচ্ছে না।এই পৃথিবীতে কেউ না খেয়ে মৃত্যু বরণ করার জন্য আসে নি।আমরা যদি একটু ওই মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখাই তাহলে তারা না খেয়ে মৃত্যু বরণ করবে না।