১লা ফেব্রুয়ারী আমার বাবার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বাবা। আপনার জন্য এই সুন্দর পৃথিবীতে আসা আপনার জন্য নিজের অস্কিত্ব পাওয়া।তুমি আমার গর্ব আমার আদর্শ বাবা।আপনাকে আমি বাবা রূপে পেয়ে আমি ধন্য আজ আপনার জন্মদিন এই দিনটা আপনার জীবনে বারবার আসুক সেই কামনা কি আল্লাহ কাছে বাবা মা আল্লাহ দেওয়া সেরা উপহার আমার জীবনে। অনেক অনেক ভালবাসি। আমার বাবা আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মানুষদের মধ্যে একজন। তিনি সারাটা জীবন অত্যন্ত স্বচ্ছতার ও পরিশ্রমের সাথে জীবনটা অতিবাহিত করছেন। খুব কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছেন। সেই প্রথম আমার অক্ষর দেখা। ভালো করে বুঝিও না অথচ কি এক আনন্দে,বিস্ময়ে আমি সেগুলি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি। এরকম আরো কত বিস্ময়,কত অজানাকে প্রথম জেনেছি তোমার হাত ধরে ! বন্ধুর মত করে শিখিয়েছো “বড়লোক না বড়মাপের মানুষ হওয়াটাই সত্যিকারের স্বার্থকতা জীবনে।”যখন একটু একটু পড়তে শিখেছি তখন আমার হাতে তুলে দিয়েছো বই।কত মজার মজার গল্প,ছবি -যেন স্বপ্নের একটা জগৎ। সেইসাথে বেড়েছে জানার পরিধি।এইভাবে বাবা তোমার সঙ্গ,মমতা,শিক্ষা,অনুপ্রেরণা,আদর্শ পরতে পরতে অনুভব করি নিজের ভেতর।
তুমি শুধু আমার বাবা-ই না,আমার মা,আমার বন্ধু,আমার শিক্ষক,আমার জীবনের দিকনির্দেশক। ‘আয় রে আমার কাছে আয় মামণি, এ হাতটা ভালো করে ধর এখনই…’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দরাজ কণ্ঠের এই সুরেলা ডাকে কন্যার প্রতি বাবার স্নেহের যে চিরায়ত আকুলতা প্রকাশিত হয়েছে—তা হয়তো প্রতিটি পিতা-কন্যাই উপলব্ধি করেন। সংসারে পিতা-কন্যার এই যে অপরূপ ভালোবাসা, এই যে বন্ধন, তা যেমন নির্মল, তেমনি নিঃস্বার্থ আর পবিত্র। কোথা থেকে যে বাবার জন্য এত মায়া, এত ভালোবাসা, এত টান তৈরি হয়েছে বুঝতে পারি না। শুধু বুঝি বাবা আমার পরম প্রিয় বন্ধু। আমার অনুপ্রেরণা। আমার আত্মবিশ্বাস। আমার ছেলেবেলায় আমার মায়ের চাইতে বাবার সাথে অনেক বেশী সখ্যতা ছিল। মা মোটামোটি শাসনকারী রোল প্লে করতেই মনে হয় বেশী পছন্দ করতেন, আর বাবা তার সদা হাস্যজ্জল আর বন্ধুসুলভ স্বভাব দিয়ে খুব সহযেই আমার অনেক বেশী কাছে আসতে পেরেছিলেন। মনে আছে মা সারাদিন অনেক চেঁচামেচী করেও পড়াতে বসাতে পারে নি, তখন রাতের বেলায় বাবার একটা কথায় কেন যেন সুর সুর করে বই নিয়ে বসে গিয়েছিলাম, নাহ, আমার বাবা কে এতোটুকু ভয়ও আমি কক্ষন পাইনি। তারপরও বাবার ব্যাক্তিত্বে, তার কথায়, তার কন্ঠে কিছু একটা ছিল। এটাকে কমান্ডিং বললেও ভুল হবে।
আমার বাবা একাধারে আমার বন্ধু ও আমার গাইড। জীবনের যত বড়ই সমস্যায় পড়েছি, যেকোন জটিলতায় বাবার সাথে নির্দ্বিধায় আলোচনা করতে স্বাছ্যন্দ্য বোধ করেছি। এবং আমার কখনও মনে পরে না বাবা তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার গাইডলাইনটা এমন ছিলো যে ভালো খারাপ দুই দিক সমানভাবে আলোচনা করতেন আর সবসময় আমাকেই উদবুদ্ধ করতেন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে। আমার বাবা চিরকালই অপ্রকাশিত একজন মানুষ ! কাউকে যখন হেঁটে চলে বেড়াতে দেখি, তখন তার শরীর অভ্যন্তরে রক্তের প্রবহমানতার কথা যেমন, অদেখা হলেও জানি, আছে। তেমনি ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, এইসব অনুভূতিগুলোকে আমার বাবা খুব যেন যত্ন করেই চাপা দিয়ে রেখেছেন। প্রকাশিত হতে দেন নি ! আর, এতই স্বতঃস্ফুর্ত সেই অপ্রকাশ, সেটাকেই স্বতঃসিদ্ধ বলে জেনেছি । আমি জানি যাই ঘটুক, বাবাকে আমি পাশে পাব সব সময়, দুঃখে-সুখে-বিপদে-আনন্দে। এই অনুভূতিটাই আমাকে একটা নিরাপত্তা আর নির্ভরতার বোধ দেয়। দেয় আত্মবিশ্বাস।
লেখক : সোহেল আহমদ, সংবাদকর্মী, সিলেট।