গতবার নদী আমাইগি সব শ্যেষ কুরি দেছে। বাড়ি-ঘর, জমি-জমা সব শেষ। আমাইগি এখন থাকার জায়গাডাও নেই। মানষির জাগায় কোনও রকমে ঝুপড়ি ঘর তুলি আছি। এবার আবার বান (বাঁধ) ভাঙার মতন হুয়িগেছে। সরকারের কাছ রিলিপ চাইনে, সরকার আমাইগি নদীডা ঠিক কুরি দেক।’ সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব আমেনা বেগম এভাবেই পুনরায় নদী ভাঙনের আতঙ্কের কথা তুলে ধরলেন। তার বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিনখোলা এলাকায়। শুধু আমেনা নন, গোবরা, ঘাটাখালী, হরিনখোলার মানুষের কাছে নদী ভাঙন যেনো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই ভাঙ্গনের সাথে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে এ অঞ্চলের মানুষ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে জোয়ারের প্রভাবে প্রায় ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে ১৩-১৪/২ নং পোল্ডারের গোবরা,ঘাটাখালী ও হরিনখোলার ভেড়িবাঁধ। অধিকাংশ জায়গায় বাঁধের গোড়ায় মাটি না থাকায় সংকীর্ণ ও খাড়া হয়ে গেছে। দুর্বল বাঁধ ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে এ অঞ্চলের জনপদ। এছাড়া গত বছর ২৮ মে ঘাটাখালী গ্রামের আফতাব শেখের বাড়িসংলগ্ন পাউবো বেড়িবাঁধের প্রায় ১০০ ফুটের মত জায়গা ভেঙে নদীর জোয়ারের প্রবল স্রোতে মুহূর্তেই ভাসিয়ে দেয় ঘাটাখালী, গোবরা ও গোবরা পূর্বচক এই তিন গ্রাম। সেই ভাঙনের বাঁধটি পুনরায় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলেও এখনও পর্যন্ত সেটি সংস্কার করা হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপের মুখেও গত কয়েকমাস যাবৎ পাউবো অর্থ সংকটের টালবাহানা করে কাল ক্ষেপন করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধের বিবরণ ও সংস্কার ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে। কয়রার সদরের গোবরা গ্রামের হাফিজুর রহমান মিস্ত্রী বলেন, আমরা খুলনা জেলায় বাস করলেও নিকটবর্তী বেড়িবাঁধটি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। সঙ্গত কারণেই তারা বেড়িবাঁধ সংস্কারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না। বেড়িবাঁধ ভাঙার উপক্রম হলে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে একটু সংস্কার করে। তবে দুর্বল বাঁধ ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে গোবরা গ্রামটির। ঘাটাখালী গ্রামের আত্তাফ উদ্দিন শেখ জানান, রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ কোন চিৎকার শুনলে মনে হয় এই বুঝি ওয়াপদা ভেঙে গেছে। আমরা ভালভাবে না মোটামুটি বেঁচে থাকতে চাই। সে কারণে এ বাঁধ আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, কয়রা উপজেলার মানুষের বেশি চাহিদা নেই। তারা শুধু চায় তাদের এই রক্ষাকারী বাঁধটি সংস্কার হোক। উপকূলীয় সমস্যা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডিপি। প্রতিষ্ঠানটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ আর সুইস গেট বিপর্যয় ডেকে আনছে উপকূলবাসীর জন্য। চিংড়িঘেরে লবণ পানি তোলার সুইস গেটগুলো উপকূলের জন্য মরণ ফাঁদ। নদী-খাল ভরাট হয়েছে। ফলে জলোচ্ছ্বাস হলেই উপকূলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। এছাড়া বহুদিন বেড়িবাঁধগুলোর যথাযথ সংস্কার হচ্ছে না। তাই উপকূলে বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
সরকারের কাছ রিলিপ চাইনে, সরকার আমাইগি নদীডা ঠিক কুরি দেক ।