বাল্যবিয়ে এখনো আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় সমস্যা। এ প্রবণতার অবসান ঘটানোর জন্য প্রশাসন যথেষ্ট কঠোর এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলো বেশ সোচ্চার। এর পরও নির্ধারিত বয়সের আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ঘটনা বিভিন্ন অজুহাতে ঘটে চলেছে। রাজনৈতিক মহলের দ্বিধা বা উদ্দেশ্যের অস্পষ্টতা বা স্বার্থান্বেষী ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে আপসের মানসিকতার কারণে আইন থাকার পরও অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশ প্রবল।
সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতাও বড় কারণ। আর্থিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক কারণও রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ। কিন্তু শহরাঞ্চলের অবস্থা কি ভালো? আশাব্যঞ্জক? বাস্তবতা সে কথা বলে না। একটি জরিপের ফলে দেখা গেছে, এখনো শহরে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৪২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এ তথ্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দেয় বৈকি।
ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালে যৌথভাবে এ জরিপ চালায়। গত মঙ্গলবার জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপ প্রতিবেদনে শহরাঞ্চলে নারী ও শিশুর পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা; সুরক্ষা, পানি ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধা, শিশুশ্রম ও শিশু-নির্যাতনবিষয়ক তথ্যও উপস্থাপন করা হয়েছে। বাল্যবিয়ে বিষয়ক তথ্য বা অন্যান্য প্রসঙ্গের তথ্য, কোনোটিই সুখকর নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে বাল্যবিয়ের পরিণতি বিবিধ, বেশির ভাগই নেতিবাচক। কম বয়সে গর্ভধারণ স্বাভাবিক ও সাধারণ পরিণতি।
এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক। ঝুঁকি হ্রাসের জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়ার প্রবণতাও কম। শহরের বস্তি এলাকায় এ সমস্যার মাত্রা অনেক বেশি। জরিপের তথ্য অনুযায়ী কম বয়সে গর্ভধারণ করার পর শহরের অর্ধেকেরও বেশি (৫৪ শতাংশ) নারী ডাক্তারের কাছে যায় না। জন্মের পর প্রত্যেক শিশুকে জরুরি টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের নানা প্রচারের পরও বস্তি এলাকার ২৮ শতাংশ শিশু সেসব টিকার আওতায় আসে না।
শহরের অন্য এলাকায় জরুরি টিকাসেবার বাইরে রয়েছে ১২ শতাংশ শিশু। শহরাঞ্চলে মাত্র ২৯ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন করা হয়। অনিবন্ধিত থাকার বিষয়টি বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়; অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে সহজেই প্রাপ্তবয়স্ক বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিবাহ নিবন্ধনে উল্লিখিত বয়স যাচাই করা সম্ভব হয় না।