পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। দুর্নীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও এখানকার দুর্নীতির চিত্র অতীতে বহুবার উঠে এসেছে। রয়েছে শক্তিশালী দালালচক্র। অনেক চেষ্টা করেও সেই দালালদের দৌরাত্ম্য খুব একটা কমানো যায়নি। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর। দালালদের মাধ্যমে না গেলে পাসপোর্ট পেতে সময় বেশি লাগে এবং ভোগান্তি বেশি হয়। সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ফি হচ্ছে তিন হাজার ৪৫০ টাকা, অথচ দালালদের দিতে হয় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
জরুরি পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি ছয় হাজার ৯০০ টাকার স্থলে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেখানেই শেষ নয়, পুলিশ প্রতিবেদনের জন্যও টাকা দিতে হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। নানা ব্যবস্থার কারণে ঢাকার প্রধান অফিসের ভোগান্তি কিছুটা কমলেও আঞ্চলিক অফিসগুলোতে সেই চিত্র খুবই ভয়াবহ। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টাকা না দিলে সেখানে ফরমই জমা হয় না। ছবিতে আঠা ঠিকমতো লাগানো হয়নি বলেও ফরম জমা নেওয়া হয় না। নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ-তিন গুণ সময়েও পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায় না। তাই যাঁদের জরুরি প্রয়োজন থাকে, তাঁরা বাধ্য হন দালাল ধরতে বা অতিরিক্ত অর্থ দিতে। দালালদের মাধ্যমে এ অবস্থায়ই শুরু হয়েছে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ। কিন্তু তাতে পাসপোর্টসংক্রান্ত সেবার মান উন্নত হবে কি?
নাগরিক জীবনে পাসপোর্ট এখন অতি জরুরি বিষয়। শুধু ভ্রমণ নয়, বিদেশে কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা অনেক কারণেই মানুষকে এখন অন্যান্য দেশে যেতে হয়। পবিত্র হজ পালন করতেও প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষকে বাইরে যেতে হয়। তাই দিন দিনই পাসপোর্টের চাহিদা বাড়ছে। জানা যায়, প্রতিদিন নতুন পাসপোর্ট কিংবা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ২০ হাজারের বেশি আবেদন জমা হয়। কিন্তু সেই অতি জরুরি পাসপোর্টটি হাতে পেতেই যদি এত রকম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
সেবা সপ্তাহ উদ্যাপনই বা কতটুকু অর্থবহ হবে? জানা যায়, অনলাইনে যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের ভোগান্তি কিছুটা কম হয়। কিন্তু অনলাইনের সুবিধা এখনো সবার নাগালে নেই। সার্ভার সুবিধাও পর্যাপ্ত নয়। তা ছাড়া গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ তা বুঝতেও পারে না। তাই অনলাইন সেবার পরিধি আরো কিভাবে বাড়ানো যায়, সে চেষ্টাই করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি আঞ্চলিক অফিসে অনলাইনে আবেদনের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, লোকবল ও প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবেও সময়মতো পাসপোর্ট দেওয়া যায় না, তা দূর করতে হবে।
সর্বোপরি দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। দালালদের সঙ্গে অফিসে যাদের যোগাযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, পাসপোর্টের মতো অতি জরুরি সেবাটি মানুষের কাছে আরো সহজ ও সুলভ হোক।